Wednesday, September 15, 2010

নো ইঞ্জিনিয়ারিং ওনলি ফুটবল"

১.

খোমাখাতায় নটঘট করতে করতে হঠাত একটা বিটকেলে গ্রুপ চোখে পরল, "নো ইঞ্জিনিয়ারিং ওনলি ফুটবল" , ভাবলাম, এ আবার কেমনতরো গ্রুপ রে বাবা। বলতেই হবে, ঢুঁ মারতেই মনটা আনচান করে উঠল, আরে এ যে আমাদের মত পথ ভুলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চলে আসা ফুটবল ফ্যানাটিকদের জন্যই। দেরি না করে চটজলদি জয়েন করে ফেললাম। আর সবকিছু একপাশে থাক, কিন্তু ফুটবল না হলে আমাদের যে একেবারেই চলেনা!
২.

টানা তিন তিনটি ক্লাস শেষ করে আমরা তখন হেদিয়ে পড়েছি, কেউ কেউ কড়া করে একদফা ঘুম দিয়ে দিয়েছে অলরেডি। কে যেন এর মাঝে বেমক্কা বলে উঠল, ওই পোলাপান, বাইরে তো বৃষ্টি পড়তাসে, চল মামা মাঠে। কেউ কেউ দোনোমোনার ভাব দেখাচ্ছিল, কিন্তু পাগলকে সাঁকো নাড়াতে নিষেধ করলে আখেরে কী হয় সেটা তো জানেনই। আর যায় কোথা, সবাই এক ছুট মাঠে। এর মাঝে কেউ আবার শর্টস আনতে হলে ছোটাছোটি করে, কেউ আবার শর্টসের তো বটেই, এক্সট্যাসির বাহারি শার্টেরও নিকুচি করে মাঠে নেমে পড়ে। কাদাভরা মাঠে শেষমেশ হাস্যকর একটা খেলা হয় বটে, কিন্তু তার পরোয়া করে কে? কেউ কেউ আবার বেনসন-গোল্ডলিফের বদৌলতে নিজের ফুসফুসের বারোটা বাজিয়ে সারমেয়র মত জিভ বের করে হাঁপাতে থাকে, আবার কেউ গোলের সামনে বাংলা সিনেমার নায়ক-নায়িকার দূরত্বে থেকেও লুকা টনির দক্ষতায় নির্বিবাদে বলটা বাইরে পাঠিয়ে দেয় আর কপট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, মামা, এই মৌসুমে ফর্ম নাইক্কা; দেখিস ! পরের বার ঠিকই গোল দিমু। আমরা মুচকি হাসি, আর কিছু বলার ফুরসত পাইনা, একটু পরেই সেশনাল , এখনো টপ শীট লেখা হয়নি, দৌড়, দৌড়...

৩.

"ওই ফারুক ভাই, একটা বেনসন আর ডিউ"- হাঁক মেরে বলে তমালভাই আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, মিয়া কীসব বালছাল টিম সাপোর্ট কর- একটা প্লেয়ারও কিনতে পারলানা এই সিজনে। ওই বুইড়া স্কোলস আর গিগসরে দিয়া আর কয়দিন। তোমগো ফার্গুসনের খেল খতম, এক পাও দিয়া রাখসে কবরে- অর টাইম শেষ।

আমিও পাল্টা জবাব দিতে ছাড়িনা- ধুর মিয়া। ওইসব চেলসি-টেলসির বেইল নাই। এত টাগ অফ ওয়ারের পরও নেইমারকে কিনতেও পারলেননা, আবার কথা বলেন । কার্ভালহোর রিপ্লেসমেন্ট কে হবে দেখা যাবে নে, আর টেরি তো ভাই ওয়ার্ল্ডকাপে যা দেখাইলো, এখন অর উচিত আগে ওয়েইন ব্রিজের হাত পা ধরে মাফ চাওয়া। অন্যের বউ পটিয়ে আর কইদিন।

স্পর্শকাতর স্থানে খোঁচা দেওয়ায় এবার তমাল ভাই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন- ওই, টেরির পার্সোনাল অ্যাফেয়ার্স নিয়া কথা কইবানা, তোমাদের এককালের পেয়ারের রোনালদো কি নিজে কম লুইচ্চা নাকি? হালায় পোলা জন্ম দিসে, এখন কইতাসে ওইটার মা নাই।

ওদিকে মারুফ সশব্দে হেসে উঠলে তমাল ভাই আরো খেঁকিয়ে ওঠে- ওই মিয়া, তুমি হাসো ক্যান। এইটা হল, ক্ল্যাশ অব দ্য টাইটান্স। তোমগো ফকিরেরপুল সাপোর্টাররা এখানে আউট অফ সিলেবাস।জো কোল নাকি ওদের নয়া মেসি, শুইনা হাসমু না কানমু।

মারুফের মুখ আমসি হয়ে যায়, তবে জবাব দিতে সে কিছুমাত্র কসুর করেনা- হ, প্রিমিয়ার লিগের সবচে সাকসেসফুল দল কিন্তু আমরা। দুদিনের বৈরাগী, ভাতরে কয় অন্ন।

এভাবেই একের পর এক বেনসন ধোঁয়া হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়, আর একটু পর পর ডাক পড়ে- কালীদা, এদিকে এক কাপ চা। আর ফুটবলাড্ডা আরো জম্পেশ হতে থাকে, নিমিষের মধ্যে প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে আলোচনা চলতে থাকে। ওদিকে একটু পর আবির হাঁক পাড়ে- বস, দ্রগবা গোল দিসে।

তমাল ভাই তার জন্ডিসাক্রান্ত হলদে দাঁতের পাটি বিকশিত করে বলে- ল মিয়া, যাই, খেলা শুরু হইয়া গেসে। আমার মুখ তেতো হয়ে যায়, মনে মনে চেলসির সাপোর্টারদের পিন্ডি চটকাতে চটকাতে আমি কমনরুমের দিকে এগোতে থাকি।

৪.

ঈদ মৌসুমে আড্ডাটা বেশ ভাল জমে। সব পুরনো বন্ধুদের সাথে মোলাকাত,কথাবার্তা এদিক ওদিক গড়িয়ে শেষ পর্যন্ত আড্ডার টপিক ওই একটাই, ফুটবল। স্পেনের সাথে আর্জেন্টিনার প্রীতি ম্যাচে জয়ের পর একদফা ম্যারাডোনাকে কষে গালাগাল করা হয়, সবাইকে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত দেয়, নাহ! বাতিস্তা কোচ হিসেবে বোধহয় টিকেই গেল। জানেত্তি- ক্যাম্বিয়াসোকে না নেওয়াটা কত বড় ট্যাকটিকাল ভুল ছিল সেই পুরনো লেবুও এইফাঁকে দস্তুরমত চটকানো হয়ে যায়। কেউ মরিনহোকে জাদুকর বলে সাব্যস্ত করে, আর বাকিরা (পড়তে হবে বার্সার সাপোর্টাররা ) রিয়ালের সংশ্রবে মরিনহোর খেল খতম- এমন ঘোষণাও দিয়ে বসে। সব মিলিয়ে ঈদ পরবর্তী আড্ডাটা অবধারিতভাবে একটি ফুটবলাড্ডায় পর্যবসিত হয়,
খড়গ হাতে সমানে রাজা উজির নিধন করে চলি আমরা।

৫.

খোমাখাতা থেকে গ্রুপের শেষ লাইনকটি কিঞ্চিত পরিমার্জন করে বলা যায়- আসলেই, হলে এখন পেল্লায় প্লাজমা টিভি এসে পড়েছে, গোল বিন্দু কম , লাইভস্কোরে আমরা এখন বুঁদ হয়ে থাকি, ম্যাচের পর খোমাখাতায় একেকজন কাগুজে বাঘের হুংকার ছাড়ি, কিন্তু একসাথে খেলা দেখা, ক্যান্টিনে ফুটবল নিয়ে তক্কো থেমে থাকেনা। শেষ পর্যন্ত আমরা কিন্তু একই পথেরই পথিক, এই চর্মগোলকের সাথেই আমাদের নিত্য বসবাস, সে মাঠেই হোক, খোমাখাতায় হোক, বা কমনরুমে।

No comments:

ঢাকার প্রেম

  ‘আমরা তিনজন একসঙ্গে তার প্রেমে পড়েছিলাম : আমি , অসিত আর হিতাংশু ; ঢাকায় পুরানা পল্টনে , উনিশ-শো সাতাশে। সেই ঢাকা , সেই পুরানা পল্টন , সেই ...