ভালোবাসার গল্প বলতে পারে
অনেকেই, ভালোবাসাহীনতার গল্প বলতে পারে কজন? আমাদের ক্ষয়ে যাওয়া, পচে গলে যাওয়া
আধুনিক সমাজের সেই ভালোবাসাহীনতার গল্পটা বড় নিষ্ঠুরভাবে বলেছেন রাশিয়ান পরিচালক
আন্দ্রে জিগিন্সতেভ, তার 'লাভলেস' ছবিতে। রাশিয়ান ভাষায় ছবিটার নাম নেলিবুভ, যেটির অর্থ অবশ্য ঠিক
ভালোবাসাহীনতা বলা যায় না, বরং ইংরেজিতে বলা যেতে পারে ‘অ্যান্টি লাভ।’ তবে সেটির
আক্ষরিক কোনো অনুবাদ খুঁজে পেতে ব্যর্থ হওয়ায় আপাতত এই নামেই চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
গল্পের শুরুটা ১২ বছর বয়সী
আলিয়োশাকে নিয়ে। তার বাবা-মার মাঝে বনিবনা নেই অনেক দিন থেকেই, দুজনেই রয়েছে
বিবাহ-বিচ্ছেদের পথে। তার চেয়েও এক কাঠি সরেস হয়ে দুজনেই এর মধ্যে খুঁজে পেয়েছে
প্রেমিক-প্রেমিকাও। কিন্তু আলিয়োশাকে কার কাছে যাবে, সেটা নিয়ে একদিন দুজনের মধ্যে
হয়ে যায় তুমুল ঝগড়া। দুজনের কেউই দায়িত্ব নিতে চায় না তার, বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে
দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়ে যাচ্ছে। আলিয়োশা কাঁদতে কাঁদতেই বাবা-মার সেই কুৎসিত ঝগড়া
শোনে।
এক দিন পর হঠাৎ মা আবিষ্কার
করে, আলিয়োশা বাড়িতে নেই। স্কুল, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশি, বহু দূরে থাকা
দাদীর বাসা- কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না তাকে। বন্ধুর সঙ্গে গোপন খেলাঘরেও সে নেই।
আলিয়োশাকে খুঁজে বের করার রুদ্ধশ্বাস অভিযানের মধ্যে চলতে থাকে ছবি। রাশিয়ার
তুষারমাখা বিষণ্ণ দিনগুলোতে না থেকেও যেন থাকে আলিয়োশা। কিন্তু আসলেই কি তাকে
পাওয়া যায়? কী ঘটেছে তার ভাগ্যে? উত্তরটা পেতে অপেক্ষা করতে হয় শেষ পর্যন্ত।
আমাদের সেলফি-সর্বস্ব সমাযে
কতটা ঘুণে ধরেছে, দিনে দিনে কতটা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছি আমরা- এই ছবির পরতে পরতে
জড়িয়ে আছে সেই অশনী সংকেত। ছোট্ট আলিয়োশা তো আসলে রূপক, এই অদ্ভুত ভালোবাসাহীন
জগতে যে আবেগের কোনো জায়গা নেই, পরিচালকের প্রতি শটে সেটা চাবুকের মতো আঘাত হানতে
থাকে দর্শকের বুকে। এক অর্থে আত্মসর্বস্ব আমাদের সবার জন্য ছবিটা একরকম আয়নাই। এই
ছবিটা দেখতে আপনার ভালো লাগবে না নিশ্চিতভাবেই, তবে পরিচালক চেয়েছেনও সেটাই। কিছু
কিছু ঔষধ যতই তেতো হোক না কেন, সেটা আখেরে খেতে হয়ই।