খটখট শব্দ করে এগুচ্ছে ঘোড়া, রেখে যাচ্ছে ধূলিধূসর রাস্তা। পেছনে পড়ে
আছে বিস্তীর্ণ রুক্ষ উষর প্রান্ত। মাথায় কাউবয় হ্যাট পরে ঘোড়া থেকে নামলেন একজন।
হোলস্টারে পিস্তল, প্রথম দর্শন বলে দিচ্ছে লোকটাকে মচকানো যাবে না সহজে। স্যালুনে
ঢুকল লোকটা, অর্ডার করল বিয়ারের। এরপর কথা কাটাকাটি থেকে শুরু হলো গানফাইট, কেউ
কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক ড্রতেই শেষ কয়েকজন।
ওয়েস্টার্ন যারা পড়েছেন, তাদের কাছে এই বর্ণনা চেনা তো বটেই, ক্লিশেও
লাগতে পারে। বাংলাদেশের পাঠকদের ‘বুনো পশ্চিমের’ সঙ্গে পরিচয় করে দিয়েছিল সেবা
প্রকাশনী। র্যাঞ্চ, কাউবয়, আউটল, বাউন্টি হান্টার, স্যালুন, ডুয়েল... এই
শব্দগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের অনেকের মতো আমারও চেনা সেই ছেলেবেলা থেকেই। একটু বড়
হয়ে জেনেছিলাম, পশ্চিমের সেই গল্প আধা বাস্তব, আধা কল্পনা। টেক্সাস আর
ক্যালিফোর্নিয়ার মাঝের বিস্তীর্ণ অঞ্চলটাই পরিচিত বুনো পশ্চিম নামে।
একটা সময় সোনার সন্ধানে সেখানে পঙ্গপালের মতো ছুটে এসেছিল অনেকে, এরপর থেকেই সেই উষর অঞ্চলে নাগরিক সভ্যতা গড়ে উঠতে শুরু করে। তবে গানফাইটের সব বর্ণনা বাস্তব নয় পুরোপুরি, কথায় কথায় হয়তো ডুয়েলও হতো না। কিন্তু ছেলেবেলায় যে পশ্চিম কল্পনা করেছিলাম, একটু বড় হয়ে তার অনেকটুকুর দেখা পেলাম পর্দায়। সেটার মূল কুশীলব পাঞ্চো পরা একজন চৌকোনো মুখের আমেরিকান, ক্লিন্ট ইস্টউড যার নাম। আর পর্দার পেছনে ছিলেন দুজন। হলিউডে বুনো পশ্চিমের মূল রূপকার পরিচালক সার্জিও লিওন আর সুরের ভুবনটা ভরিয়ে তুলতেন এনিও মরিকনি। লিওন চলে গেছেন আগেই, আজ নব্বই পেরিয়ে চলে গেলেন মরিকনি।
একটা সময় সোনার সন্ধানে সেখানে পঙ্গপালের মতো ছুটে এসেছিল অনেকে, এরপর থেকেই সেই উষর অঞ্চলে নাগরিক সভ্যতা গড়ে উঠতে শুরু করে। তবে গানফাইটের সব বর্ণনা বাস্তব নয় পুরোপুরি, কথায় কথায় হয়তো ডুয়েলও হতো না। কিন্তু ছেলেবেলায় যে পশ্চিম কল্পনা করেছিলাম, একটু বড় হয়ে তার অনেকটুকুর দেখা পেলাম পর্দায়। সেটার মূল কুশীলব পাঞ্চো পরা একজন চৌকোনো মুখের আমেরিকান, ক্লিন্ট ইস্টউড যার নাম। আর পর্দার পেছনে ছিলেন দুজন। হলিউডে বুনো পশ্চিমের মূল রূপকার পরিচালক সার্জিও লিওন আর সুরের ভুবনটা ভরিয়ে তুলতেন এনিও মরিকনি। লিওন চলে গেছেন আগেই, আজ নব্বই পেরিয়ে চলে গেলেন মরিকনি।
ওয়েস্টার্ন ছবি যারা দেখেছেন, যে কোনো একটা ছবির কথা বলতে গেলে বেশির
ভাগ বলবেন ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দা আগলির কথা।’ আর অতি অবশ্যই মস্তিষ্কে
টুংটাং করে বাজবে সেই অমর সুর। সমগ্র চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অবচেয়ে আইকনিক
সংগীতগুলোর একটি এই গুড ব্যাড এন্ড দ্য আগলির সেই সুর। এক্সট্যাসি অব গোল্ড (মেটালিকা
ভক্তেরা এটার নাম বিলক্ষণ শোনার কথা) এই ছবিরই যুগন্ধর কাজ, পরবর্তীতে যেটা বহুবার
বহু জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে। আরও দুইটি ছবির নাম এসে পড়ে সম্পূরকভাবেই। ফর আ ফিউ
ডলারস মোর এবং আ ফিস্টফুল অব ডলারও একইরকমভাবে অবিস্মরণীয় কিছু কাজ করেছেন। আমার
কাছে সব সময় মনে হয়, এই সঙ্গীতায়োজনের জন্যই ডলার ট্রিলজি আরও বেশি অমর হয়ে আছে।
ওয়েস্টার্ন ছবি মানে শুধু বন্যতা বা গানফাইট নয়, এখানে মিশে আছে উদাসী কাউবয়ের অ্যাপালুসার পিঠে মাইলের পর মাইল পাড়ি দেওয়ার রোমান্টিকতা। এখানে আছে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের অদ্ভুত একটা ছবি। এই কোমল-কঠোরে মেশানো প্রকৃতির মূল সুরটা খুব ভালোভাবে ধরতে পেরেছিলেন মরিকনি। এজন্যই যত বার ডলার ট্রিলজির সুর বেজে ওঠে, ততবার কেমন যেন আনমনা হয়ে যাই। পরে জানতে পেরেছি, এই সিনেমাগুলো করতে পুরো অর্কেস্ট্রা করার মতো বাজেটই ছিল না মরিকনির। সেজন্য কিছুটা ‘ইম্প্রোভাইজ’ করতে হয়েছিল, বন্দুকের গুলি, চাবুকের শব্দ, বাঁশি এসব ব্যবহার করতে হয়েছিল। ১৯৬৪ সালে আ ফিস্টফুল অব ডলারসের শুরুর পর এই ধারাটাই পরিচিত হয়ে যায় স্প্যাগেটি ওয়েস্টার্ন নামে। এরপর থেকে লিওন আর মরিকনি এই ধারার ছবির ক্ষেত্রে হয়ে ওঠেন হরিহর আত্মা। মরিকনি সম্ভবত তার সেরা কাজগুলোর একটি করেছেন ‘ওন্স আপন আ টাইম ইন দ্য ওয়েস্টে’। এই ছবির উত্থান-পতনটা একটু জটিল ছিল, মরিকনি সেই দ্বন্দ্বটা ধরতে পেরেছিলেন দারুণভাবে।
ওয়েস্টার্ন ছবি মানে শুধু বন্যতা বা গানফাইট নয়, এখানে মিশে আছে উদাসী কাউবয়ের অ্যাপালুসার পিঠে মাইলের পর মাইল পাড়ি দেওয়ার রোমান্টিকতা। এখানে আছে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের অদ্ভুত একটা ছবি। এই কোমল-কঠোরে মেশানো প্রকৃতির মূল সুরটা খুব ভালোভাবে ধরতে পেরেছিলেন মরিকনি। এজন্যই যত বার ডলার ট্রিলজির সুর বেজে ওঠে, ততবার কেমন যেন আনমনা হয়ে যাই। পরে জানতে পেরেছি, এই সিনেমাগুলো করতে পুরো অর্কেস্ট্রা করার মতো বাজেটই ছিল না মরিকনির। সেজন্য কিছুটা ‘ইম্প্রোভাইজ’ করতে হয়েছিল, বন্দুকের গুলি, চাবুকের শব্দ, বাঁশি এসব ব্যবহার করতে হয়েছিল। ১৯৬৪ সালে আ ফিস্টফুল অব ডলারসের শুরুর পর এই ধারাটাই পরিচিত হয়ে যায় স্প্যাগেটি ওয়েস্টার্ন নামে। এরপর থেকে লিওন আর মরিকনি এই ধারার ছবির ক্ষেত্রে হয়ে ওঠেন হরিহর আত্মা। মরিকনি সম্ভবত তার সেরা কাজগুলোর একটি করেছেন ‘ওন্স আপন আ টাইম ইন দ্য ওয়েস্টে’। এই ছবির উত্থান-পতনটা একটু জটিল ছিল, মরিকনি সেই দ্বন্দ্বটা ধরতে পেরেছিলেন দারুণভাবে।
শুধু ওয়েস্টার্ন ছবির কথাই বলা হচ্ছে, তবে মরিকনির এর বাইরেও মনে
রাখার মতো আরও অনেক কাজ আছে। আনটাচেলবস, ব্যাটল ফ্রম আলজিয়ার্স থেকে আরও অনেক
কিছুই। কুইন্টিন টারান্টিনো ছিলেন তার বড় ভক্ত, সেই কিল বিলেই মরিকনির স্কোর
ব্যবহার করেছিলেন। পরে ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস, হেইটফুল এইটেও শোনা গিয়েছিল
মরিকনির চেনা সিম্ফোনি। অস্কার পেয়েছিলেন পরে টারান্টিনোর সঙ্গে কাজ করে।
ওয়েস্টার্ন ছবির বাইরে আমার মরিকনির সবচেয়ে প্রিয় কাজ সিনেমা
পারাদিসো। এই সিনেমাটা নানা কারণে নস্টালজিয়া জাগায়, খুব প্রিয় ছবির ছোট তালিকায়ও
তা থাকবে। সালভাতোরে যখন নানা উত্থান পতনের পর সিসিলিতে নিজের শহরে ফিরে আসে,
আলফ্রেডোর প্রয়াণ তাকে দাঁড় করিয়ে দেয় অমোঘ এক সত্যের সামনে। থিয়েটারে আলফ্রেডোর
কেটে রাখা ফিল্মগুলো তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় হারানো শৈশবে। সিনেমা পারাদিসো এই
সমাপ্তির জন্যই আরও বেশি স্মরণীয়, আর সেটার অনেকটুকু কৃতিত্ব মরিকনির মিউজিকের।
সুর দিয়েই ওরকম বুক উথাল পাতাল করা অনুভূতি আর কেউ করতে পারতেন বলেও মনে হয় না।
সালভাতোরে বা তোতোর সেই ছবির মতো আজ স্মৃতি হয়ে গেলেন মরিকনিও। এই
লেখার সময়েই পেলাম এন্ড্রু কিশোরের চলে যাওয়ার খবর। আমাদের সুরের ভুবনে আজ তাই
শুধুই বিষাদের সিম্ফোনি।
No comments:
Post a Comment