Tuesday, December 29, 2020

টোটা রায় চৌধুরী: পটে আঁকা ফেলুদা

 খুব সম্ভবত বাঙালি দর্শকের ফেলুদা নিয়ে সারাজীবনের একটা অতৃপ্তি ছিল, পারফেক্ট ফেলুদা সেভাবে পাওয়া হয়নি কখনো। সেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় থেকে সব্যসাচী চক্রবর্তী থেকে কখনো সখনো করা আবীর চট্টোপাধ্যায় থেকে সবাইকে নিয়ে হয়তো খুঁতখুঁতানি থেকে গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সত্যজিৎ যেমন ছবি এঁকেছিলেন, ঠিক তেমন একটা ফেলুদা বোধ হয় পাওয়া গেল। সৃজিতের ফেলুদা ফেরতের প্রথম পর্ব ছিন্নমস্তার অভিশাপ দেখতে গিয়ে এরকমই মনে হচ্ছিল। 


টোটা রায় চৌধুরী লোকটার মুখের আদল ঠিক যেন সত্যজিতের আঁকা সেই ফেলুদার ছাপ। প্রথম দেখাতেই টোটাকে অনেকখানি মনে ধরে যাবে আপনার। সেই চৌকোনো মুখ, দোহারা গঠনের সঙ্গে অন্তর্ভেদী চোখ। সঙ্গে উচ্চতাটাও মোটামুটি ঠিকঠাক। এ তো গেল বাইরের দেখায়, অভিনয়ে টোটা কত পাবেন? এখানে হয়তো দুই রকম মত থাকতে পারেন। কেউ বলতে পারেন, টোটা বড্ড বেশি আড়ষ্ট, একটু যেন বেশিই গম্ভীর। এখানে টোটার হয়তো উন্নতির সুযোগ থাকলেও থাকতে পারে। তবে আমার মতো কারও মনে হতে পারে, টোটার এই মাপা অভিনয়টা ফেলুদার সাথে ভালোমতোই মানিয়েছে। ফেলুদাকে এরকমই খানিকটা স্বল্পবাক, চুপচাপ হিসেবে কল্পনা করেছিলাম। অবশ্যই রসবোধ ছিল, সেই ড্রাই হিউমার এখনো ঠিক টোটা হয়তো পুরোপুরি আত্মস্থ করতে পারেননি (যেটার মূল পরিচয় পাওয়া যেত জটায়ুকে টিপ্পনী কাটার মাধ্যমে)। তবে সব মিলে টোটা আপাতত উতরে গেছেন। 


এখানেই সারাজীবনের একটা আপসোস ছিল। সৌমিত্রের অভিনয় নিয়ে বলার কিছু নেই, সোনার কেল্লা বা জয়বাবা ফেলুনাথের সেই সৌমিত্রই আমাদের চিরচেনা ফেলুদা। কিন্তু ঠিক ফেলুদাসুলভ মুখের আদল বা ব্যক্তিত্বটা তার সেভাবে ছিল কি না সেটা তর্কসাপেক্ষ। সত্যজিত নিজেও যতটা না ফেলুদা, তার চেয়ে অনেক বেশি খুঁতখুঁতে ছিলেন জটায়ুকে নিয়ে। সেজন্য সন্তোষ দত্ত মারা যাওয়ার পর আর ফেলুদাই করলেন না। সৌমিত্রর ফেলুদা যাত্রা তাই দুইটি ছবিতেই শেষ (যদিও ঘুরঘুটিয়ার ঘটনা আর গোলকধাম রহস্য নামে দুইটি টিভি চলচ্চিত্র করেছিলেন, কিন্তু সেগুলোর লিংক খুঁজে পেলাম না)।


সত্যিকার অর্থে ছেলেবেলায় আমরা সব্যসাচীকে দেখেই বড় হয়েছি। টিভিতে আমার প্রথম দেখা ফেলুদা গোঁসাইপুর সরগরমের সেই সব্যসাচী আর সেই জটায়ুতে রবি ঘোষ। সব্যসাচীর উচ্চতা, গড়ন সবকিছুই ঠিকঠাক। ড্রাই হিউমারটাও দারুণ, কিন্তু বড্ড দেরিতে ফেলুদা করা শুরু করেছিলেন। আর মুখাবয়বটাও ঠিক ফেলুদার সাথে মানানসই মনে হয়নি। একটা সময় আর কাউকে না পেয়ে বুড়ো বয়সেই তাকে ধরেবেঁধে ফেলুদা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবির আর পরমব্রতরা যে ফেলুদা করেছেন, সেগুলো আসলে কমবেশি ছেলেমানুষিই হয়েছে। শার্লক নিয়ে যেমন বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ আইকন হয়ে উঠেছে, বাঙালি সেভাবে আর ফেলুদাকে পায়নি। 




টোটা সেই আইকন হতে পারবেন কি না, সেটা এখনো অনেক দূরের পথ। সেজন্য সৃজিতেরও প্রচুর খাটাখাটনি করতে হবে। প্রথম চেষ্টায় তার নির্দেশনা উতরে যাওয়ার মতো, কিন্তু আবহসংগীত আর চরিত্র নির্বাচনে আরও উন্নতির সুযোগ আছে। অনেক জায়গায় আবহ সংগীত খাপছাড়া মনে হয়েছে। ফেলুদার মজা এই, ছোটখাট চরিত্রগুলোর অভিনয়গুণে প্লট আরও জমে উঠে। সেদিক দিয়ে নীলিমা দেবির মত কারও অভিনয় আরও ভালো হতে পারত। তবে জটায়ুতে অনির্বাণ আর নতুন তোপসে অ্যাভারেজ ছিলেন, তাদেরও সুযোগ আছে উন্নতি করার। 


তবে শুধু টোটার জন্যই ফেলুদা ফেরতের পরের অধ্যায়ের জন্য এখন তৃষিত অপেক্ষা থাকবে।



1 comment:

Anonymous said...

Online casino | KDPintar
If you are a member of the KDPB or a member of the 메리트 카지노 KDPB or an active KDPB, you will be eligible for the bonus and is eligible for 온카지노 this offer. KdPintar offers 카지노 24/7

ঢাকার প্রেম

  ‘আমরা তিনজন একসঙ্গে তার প্রেমে পড়েছিলাম : আমি , অসিত আর হিতাংশু ; ঢাকায় পুরানা পল্টনে , উনিশ-শো সাতাশে। সেই ঢাকা , সেই পুরানা পল্টন , সেই ...