Friday, March 1, 2019

বানিয়ালুলুঃ কল্পবিজ্ঞানের চেয়েও বেশি কিছু







পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ বানিয়ালুলু (বিজ্ঞান কল্পগল্প) / শিবব্রত বর্মণ



কল্পবিজ্ঞান বা সায়েন্স ফিকশন আমরা যাকে বলি, তার মধ্যে কত শতাংশ বিজ্ঞান আর কত শতাংশ কল্পনা থাকবে সেরকম বাঁধাধরা কোনো নিয়ম নেই। বা কল্পবিজ্ঞান মানেই এলিয়েন, স্পেসশিপ, কপোট্রন বা এরকম কিছু জার্গন থাকতে হবে এরকম কোনো দিব্যিও কেউ দেয়নি। আমাদের বাংলাদেশের গল্পে ঘুরে ফিরে এসব অবশ্য চলে আসেই। কল্পবিজ্ঞানে মহাজাগতিক ব্যাপারস্যাপার থাকবেই, সেটা যেন একটা স্বতঃসিদ্ধের মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বানিয়ালুলুতে যে এসব একদমই নেই, তা নয়। তবে ভাবনার অভিনবত্বের কারণে এই বইকে বাংলা ভাষার ইদানীংকার সব কল্পবিজ্ঞান বইয়ের সঙ্গে মেলানোটা অনুচিত হবে।

বইটি কৌতূহলোদ্দীপক আরও একটা কারণে। ব্ল্যাক মিররের মতো আধা ফ্যান্টাসি আধা সাইফাই আমরা যারা দেখেছি, তারা জান বিজ্ঞান আমাদের প্রতিনিয়ত একটা বিষণ্ণতার গভীর ব্ল্যাকহোলে নিয়ে যাচ্ছে। হারিরির বহুল আলোচিত স্যাপিয়েন্সে যেমন বলা হয়েছিল, কৃষিবিপ্লব হচ্ছে মানব সভ্যতার সবচেয়ে বড় ধোঁকা- খানিকটা তেমন। বানিয়ালুলুর গল্পগুলো সেই বিষণ্ণতার নিনিষ স্কেলে বেশ ওপরেই থাকবে। নাম গল্পটি দিয়ে শুরু বইয়ের। এই গল্পটা সাইফাইয়ের চেয়ে ফ্যান্টাসি বলাই শ্রেয়। এবং এই গল্পে প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি গভীর সার্কাজম আমাদের চোখ এড়ায় না।

তবে বইটা সত্যিকার অর্থে তরতর করে এগিয়ে যেতে থাকে দ্বিতীয় গল্প থেকে। 'জাগার বেলা হলো' স্বপ্ন নিয়ে দুই লোকের কথোপকথনে এগিয়ে চলা বেশ জমজমাট একটা গল্প। যার শেষটা হয়তো আপনি অনুমান করে ফেললেও ফেলতে পারেন, তবে সেটাই তার বাইরেও গল্পটা অনেক বেশি শক্তিশালী। দুই শিল্পী গল্পটা কল্পবিজ্ঞানের একটা চেনা ফর্মুলায় চলেছে, কিন্তু তার মধ্যেও গল্পকারের একটা মুন্সীয়ানা টের পাওয়া যায়। 'ভেতরের আসতে পারি'র রোবোটিক দ্বন্দ্ব বা আরেকটি চেনা ফর্মুলার ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ (ফর্মুলাটার নাম বলছি না, সেটা স্পয়লার হয়ে যাবে) উতরে যায় ভালোমতোই। 'দ্বিখন্ডিত' গল্পেও অ্যাবসার্ডিটির রেশটা আছে ভালোমতোই। পরের গল্পটা 'ড মারদ্রুসের বাগান', আমার কাছে এটা বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে। ইন্টারনেট ব্রেক করা বা এর শেকড় নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে, তাদের ভালো লাগার কথা। 'বহু যুগের ওপার থেকে' গল্পটা অবশ্য ঠিক জমেনি, আবার 'সার্কাডিয়ান ছন্দ' গল্পটা আমার কাছে বেশ অভিনব লেগেছে। 'বুলগাশেম প্যারাডক্স' আর 'মইদুল ইসলামের শেষ তিন উপন্যাস'- চেনা কিছু ফর্মুলা ধরে এগিয়েছে (এখানেও স্পয়লারের আশঙ্কায় বিস্তারিত বলছি না)। তবে থ্রিলারসম রোমাঞ্চে এই দুইটি গল্পই আপনাকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখবে।

মোদ্দা কথায় মনে হয়েছে লেখকের একটা বহুদর্শী কৌতূহলী চোখ আছে, বিজ্ঞানের সর্পিল জগতটা যিনি কল্পনার রঙিন চশমায় দেখতে ভালোবাসেন। প্রযুক্তির সমস্যাগুলো তাঁকেও পীড়িত করে, খোঁচা দেয়, যে অস্বস্তিটা তিনি ‘ভাইরাল’ করতে পেরেছেন পাঠকের মধ্যে। অনেক দিনের মধ্যে বাংলা ভাষার কলবিজ্ঞান জগতে এই বইটি তাই স্বতন্ত্র আলোচনার দাবি রাখে। আর বইয়ের ফ্ল্যাপে লেখক যেমন বলেছেন, আমি নিজে তাঁর পরবর্তী বইয়ের অপেক্ষায় থাকব, ‘অনুসন্ধিৎসা ও সন্তরণমগ্নতায়।’

ঢাকার প্রেম

  ‘আমরা তিনজন একসঙ্গে তার প্রেমে পড়েছিলাম : আমি , অসিত আর হিতাংশু ; ঢাকায় পুরানা পল্টনে , উনিশ-শো সাতাশে। সেই ঢাকা , সেই পুরানা পল্টন , সেই ...