Wednesday, April 21, 2021

অন্ধের স্পর্শের মতো চলে গেলেন শঙ্খ ঘোষ

 সব কবিদের গদ্য সুন্দর হয় না। কেউ কেউ আছেন যাদের দুই হাতে একসঙ্গে বাজে কবিতা আর গদ্যের যুগলবন্দি। শঙ্খ ঘোষের গদ্যই সত্যিকার অর্থে পড়েছিলাম আগে। বইয়ের ঘর বইতে পড়েছিলাম একটা বইয়ের দুই মলাটে ভিড় করে থাকা গল্প। কী মোলায়েম সেই ভাষা! এরপর পড়লাম অন্ধের স্পর্শের মতো। এরপর আরও নানা কিছু। বইয়ের ঘর থেকে কয়েকটা ছত্র এখানে তুলে দিচ্ছি। 


"আবারও কি তবে হারিয়ে ফেললাম বইখানা?

আগেও হারিয়েছিলাম একবার। সেটা টের পাবার সঙ্গে সঙ্গে মনে হয়েছিল অল্প বয়সের একটা অংশই যেন হারাল আমার জীবন থেকে। সেটা যে বইয়ের ভিতরকার কোন মহিমার জন্য, তা কিন্তু নয়। সেটা তার চারপাশে ঘিরে থাকা অনুষঙ্গের জন্য। ভিতরের কথাগুলি ছাড়াও আরো কত সম্পদ থাকে বইয়ের, থাকে কত ব্যক্তিগত মুহূর্তের স্তবকে স্তবকে খুলে যাওয়া স্মৃতি, কোনো একখানা বই হাতে নিলে যেন কোনো নিজস্ব জীবনাংশই জেগে ওঠে তাই। কোনো বইয়েরই কোনো বিকল্প-বই হতে পারে না, একই সংস্করণের একই মুদ্রণের হলেও তা হয় না। প্রত্যেকটা বই-ই জেগে থাকে তার একলা গরিমায়, একক ইতিহাসে।"

শঙ্খ ঘোষ একটা সময় ডুব দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথকে। রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে তার বই ‘এ আমির আবরণ” যারা পড়েছেন, তারা কিছুটা অনুভব করতে পারবেন কতটা মগ্ন ছিলেন তিনি রবীন্দ্রচৈতন্যে। সেটা ব্যাখ্যা করে বোঝানো মুশকিল, এবারও কয়েকটা লাইন তুলে দেওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না।

‘যে মুখে তিনি আমার দিকে আসিতেছেন আমি যদি সেই মুখেই চলিতে থাকি তবে তাঁর কাছ থেকে কেবল সরিতে থাকিব, আমি ঠিক উলটা মুখে চলিলে তবেই তো মিলন হইবে।

তিনি রূপ ভালোবাসেন, তাই কেবলই রূপের দিকে নামিয়া আসিতেছেন। আমরা তো শুধু রূপ লইয়া বাঁচি না, আমাদের তাই অরূপের দিকে ছুটিতে হয়। তিনি মুক্ত, তাই তাঁর লীলা বন্ধনে, আমরা বদ্ধ, সেইজন্য আমাদের আনন্দ মুক্তিতে। এ কথাটা বুঝি না বলিয়াই আমাদের যত দুঃখ।’

শঙ্খ ঘোষের কবিতা নিয়ে খুব বেশি বলবার কিছু নেই। মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনের মতো মুখে মুখে ছড়িয়ে যাওয়া কবিতা ছাড়াও তার অনেক কবিতাই পরানের গহীনে নিয়ে কড়া নাড়ে। শঙ্খ ঘোষের শ্রেষ্ঠ কবিতার প্রায় সবগুলোই তাই হৃদয়ের অনেক কাছাকাছি। এর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় কবিতাটা দিয়েই কবির প্রয়াণদিবসে এই বিদায়ী তর্পণ ... 

যে দূর দূরের নয়, যে দূর কাছের থেকে দূর

যে আকাশ ভরে আছে আকাশের ভিতর বিধুর

যে স্বর স্বরের চেয়ে চেয়ে শরীরের আরও কাছাকাছি

আমার ভিতরে আমি ক্ষীণ তার প্রান্ত ছুঁয়ে আছি।

যে তুমি তোমারও চেয়ে ছড়িয়ে রয়েছ অবিনাশ

যে তুমি পাথরে ফুল সে তুমি সজলে ভাসো শিলা

কালের আহত কাল তুলে নিয়ে যায় তাঁর শাঁস

এতদিন সয়ে থেকে তার পরে ছিঁড়ে যায় শিলা

ঘুমের ভেতর ঘুমে পড়ে থাকে ডানাভাঙা হাঁস

পাটল প্রবাহে তবু অবিকল জাগে এক টিলা।

আমি সেই স্তবে ভরা নীরব পলের পাশাপাশি

কিছুই না এর প্রেমে  অবলীন হয়ে আছি। 




No comments:

ঢাকার প্রেম

  ‘আমরা তিনজন একসঙ্গে তার প্রেমে পড়েছিলাম : আমি , অসিত আর হিতাংশু ; ঢাকায় পুরানা পল্টনে , উনিশ-শো সাতাশে। সেই ঢাকা , সেই পুরানা পল্টন , সেই ...