Friday, May 31, 2013

একা এবং কয়েকজন

কলেবরে পৃথুল উপন্যাস পড়ার কিছু হ্যাপা আছে। সেরকম মন লাগিয়ে পড়তে আ পারলে আধাখেচড়া পড়ে থাকা বইয়ের সংখ্যা একেবারে কম না। আবার কিছু কিছু উপন্যাস আছে, যা নিজগুণেই টেনে ধরে রাখে চুম্বকের মতো। একবার শুরু করলে সেখান থেকে বেরুতে পারার সাধ্যি কয়জনের ?
আমরা নশ্বর মানব। এক জীবনে কটা বই-ই বা পড়া যায় ? শুধুই মনে হয় কতকিছু বাকি রয়ে গেল। তবে কিছু বই পড়ার পর মনে হয় এটা না পড়লে বড় একটা অতৃপ্তিই থেকে যেত। একা এবং কয়েকজন ঠিক সেরকম একটা উপন্যাস।
এমনিতেই সুনীলের কাছে আমার ঋণ অনেক। তাঁর বই পড়েই কাঁদতে শিখেছিলাম।  ছাপার কালো অক্ষরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কীভাবে বুঁদ হয়ে থাকা যায় সেটা তো সুনীলই শিখিয়েছিলেন। আমার কৈশোর তছনছ করে দেওয়া লোকটা তো আর কম লেখেননি জীবনে! কিন্তু একা এবং কয়েকজন পড়ার পর কেবলই মনে হচ্ছে এই ঋণের পাহাড়সম বোঝা বুঝি আমাকে সারাজীবনই বয়ে বেড়াতে হবে। শোধ করার উপায় খোঁজাও বুঝি নিরর্থক।
সুনীলের চরিত্রগুলোর ওপরও আমার বড্ড রাগ। এমন অদ্ভুতভাবে জড়িয়ে যায় আমার সবটুকুর সঙ্গে চাইলেও তাদের এড়িয়ে চলা কঠিন। এখন যদি আমি বলি আমার শয়নে শপনে জাগরণে শুধুই সূর্য, বাদল, রেণু তাহলে সেটা বড্ড নাটুকে হয়ে যাবে। কিন্তু পড়ার ঘোরলাগা সময়টুকুতে যে তারা আমার আত্মার আত্নীয় হয়ে ওঠে সেই সত্য আমি অস্বীকার করি কি করে ?
কে বলেছিল সূর্যকে এমন হতে ? পুরো পৃথিবীর ওপর যেন তাঁর প্রচন্ড অভিমান। নিজেকে গুটিয়ে রাখবে খোলসে ঢাকা শামুকের মতো। যখনই কেউ সেটা খুলে দেখতে যাবে তখনই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দেবে তাদের। কে বলেছিল সুনীলকে এমন উদ্ধত একটা চরিত্র জন্ম দিতে ? নিরবতা কেমন হিরন্ময় হতে পারে সেটা তো সূর্যের চেয়ে বেশি কেউ বোঝাতে পারেনি । নিজেকে শেষ করে দেওয়ার এমন দুর্মর ইচ্ছাটা কি আমাদের সবারই কখনো না কখনো হয় না ? কিন্তু আমরা তো একটা পুতুলনাচের কুশীলব মাত্র। নাটাইটা কার হাতে আমরা জানি না, কিন্তু অভিনয় করে যাচ্ছি দিনের পর দিন; কোন ক্লান্তি, শৈথিল্য ছাড়াই।
বাদল, রেণু এরা তো আমাদের চারপাশেরই সবাই। নিজেকে বোঝার নিরন্তর অভিপ্রায় আমাদের মজ্জার ভেতর আছে, আমি আসলে কী সেটা তো গোটা এক জনমেও বুঝতে পারি না অনেকে। কিন্তু বাদল যেন আমাদের পথটা দেখয়ে দেয়। আবার দেখিয়ে দিয়েও যেন নিজেই সরে যায় অভিমানীর মতো।
চিরঞ্জীব, বড়বাবু, দীপ্তিদেরই বা ভুলে থাকি কি করে? তারা কী চায়, কেন তারা বেঁচে থাকে নিজেরাই জানে না। তাদের সবার মধ্যে হয়তো রক্তের বন্ধন নেই, কিন্তু তার চেয়েও অনেক বড় একটা বন্ধন তাদেরকে গেঁথে রাখে অদৃশ্য সুতোয়। এত কাছের , তাও যেন বহুদূরের এসব মানুষদের কে এমন মমতা দিয়ে গড়ে তুলতে পারবেন সুনীল ছাড়া ?

বইটা পড়ার পর এসব কথাই মাথার ভেতর  ঘুরপাক খাচ্ছে অবিরত। জানি, এসব নেহাতই ছেঁদো কথা, ভাবাবেগ দিয়ে তো আর জীবন চলে না! এখানেই সুনীলের ওপর আমার ভীষণ রাগ। চাইলেও কি এদের ভুলে থাকা যায় ? মলাট বন্ধ করলেই তো আর একটা জগৎকে অস্বীকার করা যায় না। কোথাও না কোথাও আমরা যেমন দূরের নক্ষত্রদের মতো একা, আবার কোথাও কোথাও সেই একাকীত্বই যেন আমাদের সঙ্গ দেয় পরম সুহৃদের মতো। সুনীল না থাকলে এই বোধটুকুও বুঝি কখনো হতো না ! 

ঢাকার প্রেম

  ‘আমরা তিনজন একসঙ্গে তার প্রেমে পড়েছিলাম : আমি , অসিত আর হিতাংশু ; ঢাকায় পুরানা পল্টনে , উনিশ-শো সাতাশে। সেই ঢাকা , সেই পুরানা পল্টন , সেই ...