আহসানউল্লাহ হলের পেছনে একটা বেশ বড়সড় উঠোনের মত জায়গা আছে।এমনিতে ও পথটা কেউ খুব একটা মাড়ায়না,কিন্তু ওইদিন বেশ একটা জটলামত দেখা যাচ্ছিল।ব্যাপারখানা হোল,এক ছেলে কোন কারণ ছাড়াই গাছে উঠে বসে আছে তো আছেই,আর নামার নাম করে না।খানিক বাদে হন্তদন্ত হয়ে প্রভোস্ট নিজেই হাজির।
"এই ছেলে গাছে কি,নেমে এসো বলছি",প্রথমে উনি বেশ হুমকি ধ্মকি দিচ্ছিলেন।কিন্তু বিধিবাম,কোন লাভ হলোনা।ব্যাটা মুখে রা ও কাড়ে না।নিচে তখন আগ্রহী ছাত্রদের হল্লা ক্রমেই বাড়ছে।সবাই ফিসফাস ,কানাকনি করছে।কিন্তু থলের বেড়াল আর বেরোয়না,আসল ব্যাপারখানাও কেউ আঁচ করতে পারেনা।
এবার প্রভোস্ট পরিস্থিতি বুঝে সুর নরম করে ফেলেন।বেশ মোলায়েম কন্ঠে বলেন,"বাবা,ওখানে আর কতক্ষণ থাকবে।অনেক সময় তো কেটে গেল।এবার নেমে এস,তোমার বাবা মা আসছে তোমাকে নিতে।"
এরক্ষণ ছেলেটি মোটামুটি নির্বিকার ছিল,এবার সে একটু চোখ পিটপিট করে তাকাল।হঠাৎ সমবেত জনতাকে হতভম্ব করে দিয়ে সে বলে বসল,
"স্যার ক্লকওয়াইজ নামব না অ্যান্টিক্লকওয়াইজ ?"
ঘটনা ২ ঃ
রশিদ হলের এক অজ্ঞাত ফ্লোরের বারান্দা ।সকাল হয়েছে কি হয়নি।ভোরের পাখিরাও ওঠেনি তখনো।এক বিদগ্ধ বুয়েটিয়ান পড়ার টেবিল থেকে মাত্র উঠলো।সারারাত থার্মোডায়ানামিক্স ভাজাভাজা করে ফেলার মহানন্দে রাত জাগার অবসাদও তখন তার কাছে নস্যি।এবার তার মনে হোল,এবার গোসল টোসল করে ভাল একটা ঘুম দেওয়া যাবে।তো ভালভাবে শরীর প্রক্ষালণ শেষে রুমে গিয়ে বসার পর তার রুমমেটরা আবিষ্কার করল,সে অনাবৃত নিম্নাঙ্গেই রুমে চলে এসেছে!
ঘটনা ৩ ঃ
আবুল।এমনিতে ছেলেটিকে আর দশটা ছেলের চেয়ে আলাদা করাটা একটু মুশকিল,টিপিক্যাল ছাত্রদের মতই ক্লাস করে, খায় দায় ,টিউশনি করে ।কিন্তু বছরের বিশেষ একটা সময়ে তার ওপর সিন্দাবাদের না হলেও কোন এক অজানা কিসিমের ভূত যেন চেপে বসে।কথাবার্তা তখন তার নিতান্তই অসংলগ্ন,মাঝে মাঝে সামান্য কথাতেই জোরে হেসে ওঠে,আর বেশ খানিকক্ষণ সে হাসি থামার নামগন্ধও থামেনা ।
ঘটনাগুলো আপাতদৃষ্টিতে বিক্ষিপ্ত,বেশ কসরৎ করলেও কোন ধরনের যোগসূত্র বের করাটা একটু ফ্যাসাদই বটে।তবে একটা জায়গায় বেশ ভাল মিল আছে,ঘটনাগুলোর সব কয়টা কিন্তু টার্ম ফাইনালের সময়ের।বলাই বাহুল্য,তাদের এই পরিণতি টার্ম ফাইনাল নামক ভয়াবহ মেন্টাল টর্চারেরই ফসল।
(এখানে বলে রাখা ভাল,এসব কাহিনী কিন্তু পুরোদস্তুর অসমর্থিত সূত্র থেকে প্রাপ্ত,এই ব্লগে বা অন্য কোথাও কারো সাথে মিলে গেলে তার দায়ভার কিন্তু এই অধমের ওপর বর্তাবেনা।তবে আরো একটা ফুটনোট,সব কয়টি আখ্যানই অত্র এলাকায় কিংবদন্তী,তাই এসব কেচ্ছার বয়সের গাছপাথর নিরূপণ করাও এখন দুষ্কর বৈকি।)
বলছিলাম টার্ম ফাইনালের কথা।সূর্য মাত্রই পুবে ওঠে,পশ্চিমে অস্ত যায়;প্রতিটি সরকার মাত্রই জনতার পশ্চাৎদেশে বাঁশ ঢুকিয়ে যায় ,আর বুয়েটে টার্ম ফাইনাল মাত্রই পিছায়।"ইহা এখন একটি আদি ও অকৃত্রিম সত্য",তাপগতবিদ্যার তিনটি সূত্রের মত এ সূত্রটিও এখন তাবৎ হবু প্রকৌশলীদের জানা,শুধু প্রমাণটা পরীক্ষার খাতায় লিখতে হয়না, এই যা।
দুচ্ছাই,কি সব ছাতা লিখছি, যা অমোঘ তা নিয়ে ক্যাচাল করে তো আর ফায়দা নেই,বরং কাজের কথায় আসি।
এমনিতে শেষ সপ্তাহের খাটুনি খেটে সবাই নাকাল হয়ে পড়ে,তাই পিএল(
প্রিপারেটরি লিভ)শুরু থেকেই কোমর বেঁধে পাঠ্যপুস্তকের এস্পার ওস্পার করতে শুরু করে,এমন কুতুব খুব কমই আছে,(অন্তত আমার দৃষ্টিকোণ থেকে তো বটেই।)।তবে ধীরে ধীরে সময় ঘনিয়ে আসতে থাকে,পলাশীর মোড়ে ফটোকপির দোকানে ভিড় বাড়তে থাকে,প্রবাসী(ঢাকাবাসী বুয়েটিয়ানদের এই নামে সম্বোধন করা হয়ে থাকে) বুয়েটিয়ানদের ও আনাগোনা বাড়তে থাকে,কেউ কেউ আবার জবরদখল হয়ে যাওয়া সিট উদ্ধারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে,ওদিকে চানখারপুলের পেনাং বা পলাশীর মোড়ে রাতজাগা পড়ুয়ারা দলবেঁধে উদরপূর্তি করে,আর ...............ও হ্যাঁ
এতদিন যারা পরকালের আজাবের ভীতিও যাদের গ্রাস করতে পারেনি,বরং নানান দুনিয়াবী কাজ করে নিজ ঈমানের বারোটা বাজিয়েছে, আজ হল মসজিদের সামনে রাশি রাশি পাদুকার জমায়েত দেখে অনুসিদ্ধান্তে আসা যায় ,তাদের মত নালায়েকদেরও ধর্মে মতি হয়েছে,আর আর চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়...............
পরীক্ষা সমাগতপ্রায়।
(পরের পর্বে সমাপ্য)
No comments:
Post a Comment