Sunday, August 29, 2010

মৃত কবিদের জন্য এলিজি

মাঝে মাঝে একটা কথা খুব মনে হয় ,কোথায় যেন পড়েছিলাম ,অর্থনাশ ,জরা -ব্যাধি ,প্রিয়জন হারানোর মর্মন্তুদ শোক সবকিছুই একসময় ফিকে হয়ে আসে ,কিন্তু স্বপ্নের টুঁটি চেপে ধরলে সেই দগদগে ক্ষত আজন্ম বয়ে বেড়াতে হয় ,স্বপ্নহননের স্মৃতি আমাদের ফেরারি হয়ে তাড়া করে বেড়ায় অবিরত ।আর বরাত যাদের একেবারেই মন্দ ,সেই অপূর্ণ স্বপ্ন তখন নিতান্তই দুঃস্বপ্ন হয়ে তাদের ওপর সিন্দাবাদের ভূতের মত আছর করে বসে ।হয়তো বলবেন ,এতো একেবারেই ছেঁদো কথা ,সবারই তো এরকম কিছু স্বপ্ন থাকেই ,আর সবগুলো যে পূরণ হবে সে দিব্যিও কেউ হলফ করে দিতে পারবেনা ।তবে যে স্বপ্নের সাথে আবেগ গলাগলি করে বেড়ে ওঠে ,যে স্বপ্ন নেশার মত আচ্ছন্ন করে ফেলে ,সেটার অপূর্ণতায় কোথাও না কোথাও সুর কেটে যায় বৈকি ।

পিটার ওয়েইরের "ডেড পয়েটস সোসাইটি" দেখতে গিয়ে এসব কথাই মাথায় বৃত্তাকারভাবে পাক খেতে লাগল ।নামজাদা এক স্কুলের একদল তরুণের নিস্তরঙ্গ জীবনে আচমকাই একটা পরিবর্তন আসে ।প্রথাগত স্রোতে গা না ভাসিয়ে নতুন সাহিত্যের শিক্ষক তাদের স্বপ্নের গতি-প্রকৃতি আমূল পালটে দেন ,তাদের কোমল মনে বুনে দেন নান্দনিকতার বীজ ,কবিতার প্রতি তাদের ভালবাসাকে দেন উস্কে ।স্বপ্নবাজ তরুণের দল যেন সৃষ্টিসুখের নেশায় পাগলপারা হয়ে ওঠে ,অন্তঃপুরবন্দী হয়েও শিক্ষকের প্রেরণায় মায় নিষিদ্ধ কবিসঙ্ঘ অব্দি গড়ে তোলে ।কিন্তু বড়ই পাষাণভাবে তাদের এই নিখাদ রোমান্টিকতায় জল ঢেলে দেওয়া হয় ,তাদের কাব্যচর্চা মুখ থুবড়ে পড়ে বড় অসময়ে ।আর স্বপ্ন আর বাস্তবের নির্মম সংঘর্ষের বলি হয়ে উঠতি কবিদের পরিণাম হয় মর্মান্তিক।

সিনেমাটি এমন কোন কালজয়ী কিছু নয় ,তবে স্রেফ একটি বাঁধাগতের হলিউডি ছবিও অবশ্যই নয় ,খানিকটা হলেও আপনার মনে তা রেখাপাত করতে বাধ্য ।সবচেয়ে বড় কথা ,কবিতার সনাতনী ধারণাকে আস্কাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলে রবিন উইলিয়ামস যখন গমগম করে বলে ওঠেন ,"আমরা স্রেফ শখের খাতিরে কবিতা পড়িনা ,আমরা কবিতা পড়ি কারণ আমরা মানুষ ,আর কবিতা মানুষের বেঁচে থাকার খোরাক", তখন টের পাই ,আমার শিরদাঁড়া দিয়ে আবেগের এক ঠান্ডা চোরাস্রোত বয়ে চলছে ,এই যান্ত্রিক আমিও তখন ভীষণভাবে রোমান্টিক হয়ে ওঠি ,চিত্ত হয়ে ওঠে উতরোল।কারণ এই ভাবনাগুলোই আমি ভাবতাম ঠিক ঐ স্বপ্নদর্শী বয়সে ,আমার মধ্যেও হয়ত তখন সবকিছু দুমড়ে মুচড়ে দেওয়ার দুর্মর ইচ্ছে খেলা করত ,এবং বলাই বাহুল্য ,একসময় এই ক্লিশে নৈমিত্তিকতার চাপে সেই ভাবনাগুলোও আস্তে আস্তে মিইয়ে যায় ,একেবারে ঘুঁচে যায়না বটে, কিন্তু ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসে ।

তাই ছাত্রদের কানে যখন রবিন উইলিয়ামসের এই কথা অনুরণিত হতে থাকে ,"সিজ দ্য ডে ,মেক ইওর লাইভস এক্সট্রা-অর্ডিনারি"(অনুবাদ করলাম না ,পাছে রসভংগ হয় ),কেন জানি আমার কানেও কথাটি বারবার ঘুরপাক খেতে থাকে ,স্বপ্নধংসের শোকে আমি ফের আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি।

No comments:

ঢাকার প্রেম

  ‘আমরা তিনজন একসঙ্গে তার প্রেমে পড়েছিলাম : আমি , অসিত আর হিতাংশু ; ঢাকায় পুরানা পল্টনে , উনিশ-শো সাতাশে। সেই ঢাকা , সেই পুরানা পল্টন , সেই ...