অনেক দিন পর একটা ছবি দেখে মনে
হলো, সবাই আমাদের চারপাশের লোক। প্যাটারসন যেন জীবনানন্দের ওই কবিতার মতো, যে অত
তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চায় না। জীবন যা চায়, সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছাবার তার সময়
আছে, পৌঁছে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার অবসর আছে।
পেশায় সে পার্টটাইম বাসচালক, ফুলটাইম
কবি। তার প্রতিদিনের জীবন একই ছকে বাঁধা, কিন্তু এর মধ্যেই তৃতীয় নয়নে সে দেখতে পায় অনেক কিছু। বাস চালানোর ফাঁকে সে কবিতা লেখে, কিন্তু আরও অনেক না হতে পারা
কবির মতো সেই কবিতা কোথাও প্রকাশ করার ব্যাপারে তার সীমাহীন কুন্ঠা। এমনকি তার
একটা স্মার্টফোনও নেই। একেবারেই আটপৌরে জীবন তার, কোনোভাবেই তাকে খুব সফল মানুষ
বলা যাবে না। এসব কিছুই জীবনানন্দের সঙ্গে মিলে যায়, জীবন শুকায়ে গেলে যাদের
করুণাধারায় ভিজতেও ভয় হয়। এই নবীন শতাব্দীর নক্ষত্রের নিচে যারা গভীরভাবে অচল
মানুষ।
পার্থক্য শুধু একটাই, প্যাটারসনের স্ত্রী অন্তত জীবনানন্দের মতো স্বামীর
কাব্যপ্রতিভার প্রতি বিমুখ নন। নিয়মিতই তিনি স্বামীকে কবিতা প্রকাশ করতে উৎসাহ
দেন। একদিন প্যাটারসন ঠিকই করে ফেলে সে তার কবিতা নিয়ে প্রকাশকের কাছে যাবে।
এতক্ষণ পর্যন্ত ঠিকই ছিল সবকিছু। কিন্তু এর পরেই একটা ঘটনা সব ওলটপালট করে দিল।
এই পর্যন্ত সিনেমার কাহিনিতে
হয়তো নতুন কিছু নেই। কিন্তু অতি পুরাতন গল্পের মতো এই ছবির সঙ্গে কোথাও একাত্ম হয়ে
যেতে হয়। জিম জারমুশের ক্যামেরার ভাষা যেন অনেকটা কবিতার মতো, আটপৌরে ঘটনাও যখন
প্রসাদগুণে হয়ে ওঠে অসাধারণ। তবে আমার কাছে এই ছবিটা একদমই আলাদা হয়ে থাকবে শেষের
দৃশ্যটার কারণে। অ্যাডাম ড্রাইভার সেখানে যা করেছেন, তার চেয়ে ভালো করাও বোধ হয়
কঠিন ছিল। সিনেমার ভাষায় যারা কবিতা পড়তে চান, বা কবিতার ভাষায় সিনেমা, তারা ছবিটা
দেখতে পারেন।