Thursday, December 17, 2015

অর্ধেক কাল্পনিক,বাকিটা ব্যক্তিগত....

শাংগ্রিলা। শুনলেই পুরাণের কোন এক ইউটোপিয়ার কথা মনে পড়ে । কত বছর ধরে মানুষের কল্পনায় বেঁচে আছে ওই শান্ত সমাহিত স্থান। কত জন সেটিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু খোঁজাই হয়েছে সার। শাংগ্রিলা মরীচিকার মতো বিভ্রম হয়ে চিরকালই থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এই যুগে এসে শাংগ্রিলা আর কেউ খোঁজে না। কোথায় শান্তি পাব, কোথা গিয়ে বলে মানুষ এখন শুধু হাপিত্যেশ করতে পারে। তবে নদীয়ার একটা গ্রামে সেরকম আরেকটি পরম আরাধ্য জিনিস লুকিয়ে আছে। শাংগ্রিলায় যেমন শান্তি আর সুখ মেলে, মোহিনী নামের সেই গ্রামে তেমন মেলে প্রেম। সেখানে গেলেই নাকি প্রেম জিনিসটা বলেকয়েই হয়ে যায়। যারা কখনও প্রেমে পড়েনি, প্রেম কী জিনিস যাদের জানা নেই তাদেরও!

আষাড়ে গল্পের মতো মনে হচ্ছে ?  বাকিটা ব্যক্তিগত ছবিটা দেখলে মোটেই সেরকম কিছু মনে হবে না। প্রমিতও শুরুতে শাংগ্রিলার মতো কিছুই খোঁজ করছিল। মানুষের এত সব সমস্যা, মানুষ আসলে কী চায় ? এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে খুঁজতে প্রমিতের মনে হলো, আচ্ছা, প্রেম জিনিসটা কীভাবে হয় ? সবার প্রেম হয় তার হয় না কেন ? সে পেশায় তথ্যচিত্রনির্মাতা, সার্বক্ষণিক সঙ্গী ক্যামেরাম্যান অমিত। ক্যামেরা নিয়েই সে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে।

শুরুটা যেমন ধুর, বেঁচে থেকে কী হবে গোছের, একটু একটু করে গল্পটা কুন্ডলী পাকিয়ে আসতে থাকে। শুরুতে দৃশ্যপটে একজন জ্যোতিষ, সেই নরেন শাসমল নামের একজন আধখ্যাপা বুড়োর সন্ধান দেয়। সেই বুড়োর কাছে আছে এক অদ্ভুত গ্রামের হদিস। মোহিনী নামের সেই গ্রামে গেলে প্রেম হবেই। সেই প্রেম যাকে বলে স্বর্গীয়, একবার হলে সে বন্ধন কাটানো অসম্ভব। বুড়ো নিজেও জানে না, কীভাবে সেখানে যেতে হয়। প্রমিত অবশ্য হাল ছাড়ে না। বুড়োর কাছ থেকে তাঁর এক ছাত্রী মল্লিকা সাহার ঠিকানা পায়। সেই মল্লিকাই বাতলে দেন মোহিনীতে যাওয়ার পথ।

ঠিক পথ বললে অবশ্য ভুল হবে। মোহিনীতে যাওয়ার আসলে কোনো পথ নেই। নদীয়ার নাজিরপুর নামের একটা গ্রামে গিয়ে অপেক্ষা করতে হয়। সেখান থেকে কেউ একজন এসে পৌছে নিয়ে যাবে মোহিনীতে। খুবই অদ্ভুত কথা। কিন্তু প্রমিতের মাথায় রোখ চেপে গেছে। সে শেষ দেখে ছাড়বেই। অমিতকে নিয়ে সে চলে যায় নাজিরপুরে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর আসলেই একজন এসে তাদের মোহিনীতে নিয়ে যায়। কিন্তু ওখানে গিয়ে কি দুজনের জীবনে প্রেম আসে ?  বাকিটা ব্যক্তিগতই থাক।  

অন্য সব মূলধারার হোক, বা মূলধারার বাইরের হোক, এই ছবিটা অনেক দিক দিয়েই আলাদা। অমিতের হ্যান্ডিক্যামের চোখেই পুরো ছবি দেখানো হয়েছে।  পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য এই সীমাবদ্ধতা আগে থেকেই জানতেন। চাইলেই সব দৃশ্য দেখাতে পারবেন না। সেটা মেনেই ছবিটা একটু অদ্ভুতভাবেই এগিয়েছে। যেখানে অমিতের ক্যামেরা আছে, কাহিনি শুধু সেই রেখা ধরেই এগিয়েছে।

এই ব্যাপারটাই কিন্তু ছবির প্রাণ। অমিতের ক্যামেরার বেশিরভাগ ফ্রেমে শুধুই প্রমিত। তার আনন্দ, ছেলেমানুষি, ক্ষোভ, হতাশা সবকিছুই এগিয়েছে ওই ক্যামেরাতেই। ঋত্ত্বিক চক্রবর্তীর মধ্যে কেমন যেন একটা সহজাত ঘরোয়া ভাব আছে। যেটা করছেন, তার মধ্যে যেন কোথাও এতটুকু ছেনালিপনা নেই।

এই ছবির আরেকটি বড় শক্তি সঙ্গীত। এখনকার ক্লিশে হয়ে যাওয়া গিটার, পিয়ানোর টোন থেকে দুদন্ড শ্বাস ফেলার সুযোগ করে দিয়েছেন প্রদীপ্ত। বাউল গান এসেছে নানা অনুষঙ্গে, সবুজের কাছাকাছি গিয়ে এক হয়ে গেছে একতারার সুর। ধানের শীষের সাথে মিশে গেছে বাঁশির বাঁশরী, পুরো ছবিতেই সুরের প্রাচুর্য থাকলেও সেটা কখনও কানে ধাক্কা হয়ে আসে না। বরং কেমন যেন মধুবর্ষণই করে।

কিন্তু এই ছবিটা নিয়ে আলাদাভবে লেখার একটা কারণ আছে। এখনকার সব ছবিতে যেটার অভাব, সেই প্রাণ জিনিসটা এখানে প্রচুর পরিমানে আছে। প্রদীপ্ত জানেন তিনি কী দেখাতে চেয়েছেন। সেটা কতটুকু পেরেছেন এটা নিয়ে তর্ক হতে পারে। কিন্তু ছবিটা দেখার পর যেন রেশটা অনেকক্ষণ লেগে থাকে, রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের শেষ হইয়াও হইলা শেষের মতো।


Tuesday, September 1, 2015

কাঞ্চনজঙ্ঘার সামনে দাঁড়িয়ে...

একটা নিরেট গল্প ছাড়া কি কোনো ভালো ছবি হয়? বলতে পারেন, আরে মসলা ছাড়া আবার খাবার হয় নাকি ? কিন্তু কাঞ্চনজঙ্ঘা ছবিতে তো সেরকম কোনো গল্পই নেই। দার্জিলিংয়ে বনেদী একটা পরিবার ছুটি কাটাতে যায়। সেখানেই জীবনের টানাপোড়েনে তাদের কিছু কঠিন সত্যের সামনে দাঁড়াতে হয়। ব্যস, মোটাদাগে তো ছবির মূল গল্প এটাই। সেই অর্থে ওরকম কোনো ক্লাইম্যাক্সও নেই, নাটকীয় সংলাপ-টংলাপও খুব একটা নেই। তারপরও কেন আমার সবচেয়ে প্রিয় ছবিগুলোর একেবারে শুরুর দিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা থাকবে ? 



এখানেই আসলে ছবিটার অসাধারণত্ব। কাঞ্চনজঙ্ঘায় যা নেই, তার জন্যই যেন ছবিটি এত প্রিয়। ছবিটা কিছু না বলেই যেন অনেক বেশি বাঙময়, রবীন্দ্রনাথের “অনেক কথা যাও যে বলি কোনো কথা না বলি” গানের মতো। একটা পাহাড়ি লেপচা ছেলের কন্ঠে একটা এই ছবিতে একটা গান আছে। অর্থটা না বুঝলেও হৃদয়ের কোথাও যেন টোকা লাগে অদ্ভুত সুরে। শেষদিকে ওই ছেলেটার হাতে একটা চকলেট তুলে দেন ছবির অন্যতম একটা চরিত্র ব্যানার্জি। ছোট্ট একটা কথা বলেছিলেন, “নে, তোরই জিত”। কাঞ্চনজঙ্ঘা কেন সময়ের চেয়ে অনেক অনেক বেশি এগিয়ে থাকা একটা ছবি, ওই ছোট্ট দৃশ্যটাই যেন সবকিছু বলে দিচ্ছে। 



এমনিতে পাহাড়ের কাছে আসলেই মানুষের মনে একটু অন্যরকম ছাপ ফেলে। নাগরিক পঙ্কিলতা অনেকটাই ছুয়ে মুছে যায়, লোকাচারকে মনে হয় লোক দেখানো। পাহাড় মানুষকে অনেক কিছুই আড়াল করতে দেয় না, নিজেও আড়াল হতে দেয় না। সেজন্যই তো একটা চাকরির জন্য হন্যে হয়ে থাকা অশোক জাত্যাভিমানে আক্রান্ত চৌধুরীসাহেবদের মুখের ওপর চপেটাঘাত কষতে পারেন। সেজন্যই হয়তো স্বৈরিণী স্ত্রী স্বামীর কাছে অকপটে সবকিছু স্বীকার করতে পারেন, সেজন্যই হয়তো লৌকিক সম্পদ বা আরও অনেক কিছু মণির কাঁচা মনের ওপর কোনো আস্তর ফেলতে দেয় না। কাঞ্চনজঙ্ঘার মতো বিশাল কিছুর সামনে জাগতিক তুচ্ছতা, ক্ষুদ্রতা কতটা অকিঞ্চিকিৎকর হয়ে পড়তে পারে সেটার সত্যজিতের চেয়ে ভালো আর কেই বা দেখাতে পারেন ?




এম্নিতে ছবিটা সত্যজিতভক্তদের অনেকেরই একদম শুরুর দিকের তালিকায় থাকবে না। তবে এটা কিন্তু তাঁর প্রথম মৌলিক গল্প নিয়ে তৈরি রঙিন ছবি, আলাদা একটা আবেদন তো আছেই। পরিচালনার দিক দিয়েও তাঁকে একটু বেশি মাথা খাটাতে হয়েছিল। সংলাপ তো এমনিতেই কম, লং শট বা ম্যুভমেন্ট দিয়ে আবহটা বোঝানোটা অনেক বেশি দরকার ছিল। অভিনেতা-অভিনেত্রিদের কাছ থেকেও সম্ভবত সেরাটুকুই বের করে আনতে পেরেছেন। নিস্তরঙ্গ, অচঞ্চল একটা ছবিতে মানুষের বিচিত্র সব সংকটকে দেখানো খুব একটা সহজ লাজ নয়। সেই কাজটা কমবেশি সবাই ভালোই পেরেছেন। সবচেয়ে ভালো বোধহয় পেরেছে ওই লেপচা শিশুটা, স্বর্গীয় একটা হাসিতে যেন বুঝিয়ে দিয়েছে, প্রকৃতির কাছে আমরা কত তুচ্ছ!

Wednesday, August 19, 2015

রঙিন পর্দার গল্প

বনফুলের পাঠকের মৃত্যু নামে একটা ছোটগল্প আছে। কখনও কখনও মনে হয়, উল্টোটাও তো হতে পারে। ধরুন, যে বইটা অলস ফেলে রেখেছিলেন ঘরের এক কোণায়, এক পরত ধূলো জমেছিল যেটির ওপর, সেই বইটাই হয়তো আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো বুঁদ করে রাখল। পেইন্টেড ভেইল ছবিটা দেখে মনে হলো, আমার ক্ষেত্রেও যেন সেটা হলো। একসময় যে ছবিটা শুধুই সিনেমাটোগ্রাফির জন্য ভালো লেগেছিল, সেটা আরেকবার দেখে মনে হলো, আসলে ছবিটার মর্ম তখন কিছুই ধরতে পারিনি। সেটার জন্য অনুভূতির তারগুলোও অবশ্য একটু চড়া সুরে বাঁধতে পারা চাই।

একদিক দিয়ে দেখলে ছবিতে আবেগের কিঞ্চিত বাড়াবাড়ি, সোজা বাংলায় যেটাকে বলা হয় মেলোড্রামাটিক, তার কমতি নেই। স্বৈরিণী স্ত্রীর স্বামীর সঙ্গে একরকম বনবাসে যাওয়া বাধ্য হয়েই, পরে আবার সেই স্বামীর বুকেই তার অশ্রু সমর্পণ। এটুকু হয়তো আদি ও অকৃত্রিম উপমহাদেশীয় অনেক ছবির কথাই মনে করিয়ে দেবে। কিন্তু যে প্রেক্ষাপটে বিরহ মধুরাতে মধুর হলো, সেটা না বুঝলে, আসলে ছবিটা দেখার স্বাদ ষোলআনা পাওয়া যাবে না।

বাবা-মাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য কিটি দুম করে তরুণ ডাক্তার ওয়াল্টারকে বিয়ে করে পাড়ি জমায় চীনে। কাঠখোট্টা স্বামী কখনোই কিটির মন বুঝতে পারেনি (উল্টদিকেও তাই)। খুব শিগগিরই সাংহাইতে বিবাহ-বহির্ভূত প্রণয়ে জড়িয়ে পড়ে কিটি। ওয়াল্টার সেটা টের পেয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে একজন মহৎহৃদয় স্বামীর কর্তব্যও সে পালন করে, স্ত্রীকে সুযোগ দেয় প্রেমিকের কাছে ছুটে যাওয়ার। কিন্তু কিটি মানুষ বুঝতে ভুল করেছিল, মোহটা খুব তাড়াতাড়িই কেটে যায়। ভগ্নমনোরথ হয়ে তাকে যেতে হয় স্বামীর সঙ্গে চীনের দুর্গম এক এলাকায়। সেখানে কলেরার প্রকোপে মানুষ মরছে দল বেঁধে। ওয়াল্টার অবশ্য জীবন বাঁচাতেই ব্যস্ত। স্ত্রীকে দূরে ঠেলে দিয়েছে আগেই, দুজনের সম্পর্কটাও নেহাতই আনুষ্ঠানিকতার। স্বামী-স্ত্রী এক ছাদের (আক্ষরিক অর্থে ধরে নিলে ভুল করবেন।) নিচে থেকেও তাদের মধ্যে দুস্তর পারাবার। কিটি সেটা কমিয়ে আনতে চাইলেও ওয়াল্টার অটল নিজের প্রতিজ্ঞায়। এরপর কীভাবে সেই দূরত্ব ঘুচল, এক দোঁহে মিলে গেল দুইটি প্রাণ সেটা পরের গল্প।



এর মধ্যে স্থানীয় একটা কনভেন্টে কিটি জড়িয়ে পড়ে শিশুদের সান্নিধ্যে। জীবনের নতুন মানে সে খুঁজে পায়, স্বামীকেও আবিষ্কার করে নতুনভাবে। স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক কিটির নতুন একটা রূপও খুঁজে পায় ওয়াল্টারের সামনে। বাকিটা গল্পটা তোলা থাক।

যেটা বলছিলাম, ওয়াল্টারের চরিত্রে নর্টন ছিলেন তাঁর মতোই দুর্দান্ত। তবে নতুন করে দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি নাওমি ওয়াটসে। একজন নারীর নিজের সাথে সংঘাত, বারবার আঘাত পাওয়া, হৃদয় দীর্ণ হওয়া- পশ্চিমা একজন অভিনেত্রীর জন্য খুব একটা সহজ কাজ ছিল না। নাওমি বোধহয় নিজের সেরা চেষ্টাটাই করেছেন। আর সিনেমাটোগ্রাফির কথা তো না বললেই নয়। চীনের অবারিত মাঠ, শান্ত সমাহিত সৌন্দর্য আমাদের চিরচেনা গ্রামগুলোর কথাই মনে করিয়ে দেবে।

ছবিটা দেখে হয়ত মনে করতে পারেন, আবেগের বাড়াবাড়িটা একটু বেশিই, ক্লাইম্যাক্স হয়তো অতি-নাটকীয়তা দোষে দুষ্ট। কিন্তু রোমান্টিক ম্যুভির আদলে যে ছবিটা আসলে মানবতার কথাই বলে, সেটা একটু সময় দেখলে বোধহয় ক্ষতি হবে না।


Sunday, August 9, 2015

আমার দুঃখভারাক্রান্ত রাতের কথা

 (মূলঃ পাবলো নেরুদা )


আজ আমি সবচেয়ে দুঃখভারাক্রান্ত শব্দগুলো লিখতে পারি
 যেমন ধরুন, রাতটা যেন ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাচ্ছে 
দূরের ওই নীল তারাগুলো কেমন যেন কাঁপছে 
রাতের বাতাস যেন মিশে যাচ্ছে আকাশে আর সুরে


 আজ আমি সবচেয়ে দুঃখভারাক্রান্ত শব্দগুলো লিখতে পারি
 আমি তাকে ভালোবেসেছিলাম, কখনও কখনও সে-ও আমাকে
 এরকম কোনো রাতেই আমি ওকে বাহুডোরে বেঁধেছিলাম
 এই অনন্ত আকাশের নিচে আমি চুমু খেয়েছিলাম ও
কে সে কখনও কখনও আমাকে ভালোবেসেছিল, আমিও তাকে 
এমন চোখ যার আছে, তাকে কী ভালো না বেসে পারা যায় ? 


আজ আমি সবচেয়ে বেদনার কথাগুলো বলতে পারি 
ভাবতে পারি ও আর আমার নয়, আমি যেন ওকে হারিয়ে ফেলেছি 
নিঃসীম রাতের শব্দ শুনতে পারি, ওকে ছাড়া আরও নিঃসীম, আরও প্রগাঢ়
 যেমন করে চারণভূমিতে মিশে থাকে শিশির, এইসব পংক্তিগুলোও যেন তেমনি মিশে আছে সত্ত্বার সাথে 
আমার ভালোবাসা ওকে ধরে রাখতে পারেনি, এতে কি আদৌ কি যায়-আসে ? 

রাতটা দীর্ণ হয়ে গেছে, আর সে আমার পাশে নেই
 এই তো, দূরে মনে হচ্ছে কেউ গান গাইছে, অনেক দূরে
 আমার কেবলি মনে পড়ছে আমি ওকে হারিয়ে ফেলেছি 
আমি তাকে খুঁজে ফিরছি, ওর কাছে যেতে চাইছি 

আমার হৃদয় ওকে চাইছে, কিন্তু ও আমার পাশে নেই 
এই রাতটাই তো, সেই একই গাছগুলোকে ঢেকে দিচ্ছে শুভ্রতায়
 সেই আমরা আজ অনেক বদলে গেছি আমি
 আমি আর তাকে ভালোবাসি না, এটা নিশ্চিত।
 কিন্তু একসময় তো বাসতাম আমার কথা ইথারে ভেসে ওকে ছুঁয়ে যেতে চাইত
 তার ঠোঁট এখন অন্য কেউ ছোঁবে তার শুন্যতা, উজ্জ্বল শরীর, অতলান্ত চোখ
 আমি তাকে আর ভালোবাসি না, সেটা নিশ্চিত 
কে জানে হয়তো বাসতেও পারি 
ভালোবাসা কঠিন, ভুলে যাওয়াটাই সহজ

 এমন রাতগুলোতেই আমি ওকে বাহুডোরে বেঁধেছিলাম 
আমার হৃদয় ওকে না পেয়ে অতৃপ্ত
 এই আমাকে দেওয়া ওর শেষ ব্যথা 
এসবই ওর জন্য লেখা আমার শেষ চরণ

Thursday, February 5, 2015

ইতিকথার পরের কথা...

মাঝে মাঝে জানতে ইচ্ছে করে, শশী ডাক্তার এখন কেমন আছে? ওই যে গাওদিয়ার হাসপাতালটা, ওখানে কি এখনও সে শশব্যস্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়। এক মাথা উঁচু ঢিবিটার ওপর থেকে সে এখনও সূর্য দেখে ? তালবনের শনশনানি শুনে সে এখনও কেঁপে কেঁপে ওঠে ? এখনও সে কি অপেক্ষা করে, কোনো কুহকিনী এসে হাত ভাঙার নাম করে তার সঙ্গে কথা বলবে ?

সেনদিদির ছেলেটা এখন কেমন আছে ? নিশ্চয়ই এতোদিনে সে বেশ বড়সড় হয়ে উঠেছে? মায়ের রূপের কতখানি সে পেয়েছে? কাশীতে গিয়ে গোপালের খুব বেশিদিন বেঁচে থাকার কথা নয়। গঙ্গা নদীর স্রোতে হয়তো তার ছাইভস্মও ভেসে গেছে। শশী কি সেই খবরটা জানে ? সেনদিদির ছেলেও কি জানে, হাজার মাইল দূরে একজন তার জন্য কতটা অপত্যস্নেহ নিয়ে বেঁচে আছে ?

কুসুম, সেই বা কেমন আছে ? আগের সেই বাঁকা হাসির চকিত চাহনি কি খেলা করে তার মুখে ? বাজিতপুরে নিশ্চয়ই ঘরকন্না করছে, এখনও গাওদিয়ার সেই দিনগুলোর কথা ছলকে ওঠে না স্মৃতিতে? যার জন্য একদিন নিজের সবটুকুই দিতে পারত, তাকে অমন করে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য একটুও কি আক্ষেপ হয় না ? আচ্ছা, বাজিতপুরে কি তালবন আছে? সন্ধ্যার অস্তরাগে কুসুম কি ওখানে গিয়ে নিশ্চুপ বসে থাকে ?

কুমুদ আর মতিই বা কেমন আছে ? এখনও কি দুজন জলে ভাসা পদ্মের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে ? কুমুদের যাত্রা দেখে কি মতির শরীরে আগের মতো পুলক খেলে যায় ? নাকি বেলা শেষে দুজন এখন থিতু হয়েছে, জীবনের বিপুল বিস্তারে দুজন কি সব উদ্দামতাকে সমর্পণ করেছে ? কুমুদ কি এখনও মতিকে দিয়ে পা টেপায় ? আর মতি, কুমুদ কি তার খোলনলচে বদলে দিতে পেরেছে ?

মাঝে মাঝে কিছু প্রশ্নের খুঁজতে বড্ড ইচ্ছা করে।



ঢাকার প্রেম

  ‘আমরা তিনজন একসঙ্গে তার প্রেমে পড়েছিলাম : আমি , অসিত আর হিতাংশু ; ঢাকায় পুরানা পল্টনে , উনিশ-শো সাতাশে। সেই ঢাকা , সেই পুরানা পল্টন , সেই ...